ডায়াবেটিস এর সাথে সম্পর্ক যার অগ্ন্যাশয় নাম তার

 



বর্তমান সময়ের সর্বসাধারণ একটি রোগ ডায়াবেটিস। বার্ধক্যে যেমন সাধারন তেমনি যৌবনেও সাধারণে পরিণত। 

ডায়াবেটিস দুই ধরনের। একটি হল ডায়াবেটিস মেলিটাস আরেকটি ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস। 


ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস আমাদের পরিচিত ডায়াবেটিসের মত না। বৃক্কে কিছু হরমোনাল সমস্যার কারণে মূত্র তৈরীর প্রক্রিয়ায় অস্বাভাবিকতা দেখায়। মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস থেকে উৎপন্ন ADH ( anti diuretic hormone) যা পিটুইটারি গ্রন্থিতে জমা থাকে তা কম ক্ষরিত হলে কিংবা বৃক্ক এই হরমোনের প্রতি সঠিক রেসপন্স না দিলে মূত্রের ভলিউম বৃদ্ধি পায়। ফলে রোগীরা ঘন ঘন‌ মূত্র ত্যাগের প্রবণতা দেখায়, তাই ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কে বহুমূত্র রোগও বলা হয়।



তবে আমাদের বহুল পরিচিত যে ডায়াবেটিস তা হল ডায়াবেটিস মেলিটাস। এটিও হরমোনাল সমস্যার কারনে হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস মেলিটাসকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ Type 1, Type 2। এছাড়াও Gestational Diabetes নামে আরেক প্রকার ডায়াবেটিস আছে যা, গর্ভাবস্থায় ২৫% মহিলাদের প্রকাশ পায়।


-তবে অগ্ন্যাশয়ের সাথে এর সম্পর্ক কি? 

সম্পর্ক তো আছে! তবে তার আগে অগ্ন্যাশয় নিয়ে একটু জানা যাক।


মানবদেহে যে কয়টি মিশ্র গ্রন্থি আছে তার মধ্যে অন্যতম হল অগ্নাশয়। মিশ্র গ্রন্থি তাদেরকে বলা হয় যারা একত্রে বহিঃক্ষরা গ্রন্থি (Exocrine glands) ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি (Endocrine glands) হিসেবে কাজ করে। বহিক্ষরা গ্রন্থি এনজাইম নিঃসরণ করে এবং অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হরমোন নিঃসরণ করে।


অগ্ন্যাশয় এর গঠনে যে অ্যাসিনাস অংশ আছে সেটি বহিঃক্ষরা হিসেবে কাজ করে। অগ্ন্যাশয় এর এই অংশ থেকে নিঃসৃত এনজাইম ( যেমনঃ ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন, কার্বোক্সিপেপটাইডেজ, অ্যামিনো পেপটাইডেজ, কোলাজিনেজ, ইলাস্টেজ ইত্যাদি) শর্করা আমিষ ও স্নেহ পরিপাকে সহায়তা করে।


অগ্ন্যাশয় এর দ্বীপের মতো অংশ যা আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স নামে পরিচিত তা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে। এইখানে চার ধরনের কোষ থাকে। যথাঃ α, β,δ এবং PP কোষ।



α কোষ গ্লুকাগন হরমোন ক্ষরণ করে যা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। 

β কোষ ইনসুলিন হরমোন ক্ষরণ করে যা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমায়।

যখন β কোষ প্রয়োজন অনুযায়ী ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, তখন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়।



Type 1 ডায়াবেটিস সাধারণত শিশুকালে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অটোইমিউনিটির কারণে β cell ধ্বংস হয়ে যায় এবং ইনসুলিন উৎপাদন হ্রাস পায়। আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমের কোষগুলো যখন নিজেদের দেহের কোষ গুলোকে ধ্বংস করে তখন সেটাকে অটোইমিউনিটি বলা হয়।


অপরদিকে Type 2 হল সবচেয়ে কমন ডায়াবেটিসটা। প্রায় ৯০% ডায়াবেটিক রোগী এই ধরনের। সাথে বংশগতির সম্পর্ক বিদ্যমান। Type 2 এর ক্ষেত্রে ইনসুলিন উৎপাদন হয় তবে টার্গেট কোষের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তথা ইনসুলিন রিসেপ্টর সাইটের সমস্যার কারণে গ্লুকোজ শোষিত হয়না বিধায় রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়।



ডায়াবেটিস মেলিটাস হলো গ্রিক শব্দ। যেখানে মিলিটার শব্দের অর্থ মধু। রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়ার ফলে কিডনিতে রক্ত পরিশোধনের সময় অতিরিক্ত গ্লুকোজ মূত্রের সাথে মিশে গিয়ে মূত্রের মিষ্টতা বৃদ্ধি করে।

সুতরাং, অগ্ন্যাশয় এর সাথে ডায়াবেটিসের একটা মধুর সম্পর্ক আছে বলা যায়!


Abdul Hannan Akib 

Chittagong Medical College

Session 20-21


তথ্য সূত্র:

•Campbell Biology (11th Edition)

•Text book of Anatomy ( Vishram Singh, Part 2, Second Edition)

•Textbook of Medical Physiology (Guyton and Hall, 14th Edition)

•HSC Biology 2nd Paper (Gazi Publication, 7th Edition)

• Stethoscope ( Health and Medicine Journal, Nov 13-2017)

No comments:

Powered by Blogger.