Iter 18.71

আব্দুল হান্নান আকিব



পরীক্ষা শেষ না হতেই ইয়ামিন ফোন করে তার বাসায় যেতে বলল। আমি বেড়াতে খুব পছন্দ করি,তবে একা নয় বন্ধুদের সাথে।ইমরুল ও আন্নাও তার বাসায় যাওয়ার কথা বলেছিল।তাই পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আর দেরি না করে আমরা তার বাসায় চলে আসি। ইয়ামিনের বাবা বিদেশে থাকেন। ইয়ামিন তার মায়ের সাথে থাকে। ইয়ামিন প্রযুক্তিগত জ্ঞানে পারদর্শী তবে একটু ভীতু।তার মামা অ্যাস্ট্রোনট,তিনি মহাকাশ গবেষণার কাজে নিয়োজিত।আমরা রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষে ইয়ামিনের সাথে গল্প করতে বসি। গল্প করতে করতে ইয়ামিন হঠাৎ ছাদে যাওয়ার কথা তুলল।ছাদে যাব কী-যাব না,বলার আগেই ছাদে ওঠে পড়ি।
তার বাসার ছাদ থেকে আশেপাশের এলাকা অনেকটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে পূর্বদিকের উচু ঘন বনটা।তাছাড়া,আকাশটাও বেশ পরিষ্কার এবং তারা গুলোও বেশ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে অন্য মনষ্ক হয়ে পড়ি। ইমরুল উত্তেজিত হয়ে বনে,বনে বলে চিৎকার শুরু করে।ইয়ামিন তার মুখ চেপে ধরে শান্তভাবে কথা বলার অনুরোধ করল ।সে আমাদের বনের দিকে তাকাতে বলল। আমরা সেদিকে তাকায় কিন্তু কোনো কিছু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।তার দিকে তাকিয়ে বললাম,“কই,কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না”।

সে বলল,সে কিছু একটা জ্বলতে দেখেছে। আমরা তার কথা বিশ্বাস করলাম না। বিশ্বাস না করায় সে রাগ করে নিচে নেমে গেল। আমি বনটার দিকে গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম এবং ইমরুলের ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম।হঠাৎ বনের মধ্যে একটা লাল আলো জ্বলে-নিভে জেতে দেখি। ব্যাপারটা বিশ্বাস না হওয়ায় বনের দিকে চেয়েই রই এবং কিছুক্ষণ পর আবার জ্বলে-নিভে জেতে দেখি। আমি আন্নাকে জিজ্ঞেস করি কিন্তু সে খেয়াল করেনি।ইয়ামিন বলল সে দেখেছে।আমি বললাম,“এটা কী হতে পারে?” আন্না বলল,“ইমরুলের কথা সত্য হয়েছে কিন্তু আমরা তাকে বিশ্বাস করি না।চল, নিচে গিয়ে তাকে সরি বলে তার সাথে আলোচনা করি।” আমরা তার কথা মতো নিচে গিয়ে ইমরুলকে সরি বলে আলোচনা শুরু করি।অনেক কথা বলার পরে ওখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমরা ঘুমাতে চলে যায়।কোনো মতেই ঘুম আসছে না,ইচ্ছে হচ্ছে এক্ষনি চলে যায়। আমি বিছানা থেকে ওঠে বসে পড়ি।আমাকে দেখে ইমরুল ও আন্না ওঠে পড়ে।তাদেরও নাকি ঘুম আসছে না।আমরা যাওয়ার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম কিন্তু ইয়ামিন ঘুমাচ্ছিল। তাকে ঘুম থেকে ডেকে দিয়ে যাওয়ার কথা বললাম।

সে বলল,“কপাল ভালো থাকলে ঘুমিয়ে পড়।” অনেক কষ্টে তাকে রাজি করালাম।আমরা চুপি চুপি ছাদে ওঠে একটা ম্যাপ একে নিলাম,বনটা অন্ধকারের চাদরে ঢাকা। অন্ধকার মনের মধ্যে ভয়ের জন্ম দিলেও উত্তেজনা ভয়কে স্থান করে নিতে দিল না।তাড়াতাড়ি নিচে নেমে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।রাস্তার ধারে বাতিগুলো শুধু জ্বলছে।এর মধ্যেও অনেকগুলো ঠিক মত জ্বলছে না।মানুষের কোনো সাড়া-শব্দ নেই।অল্প সময়ের মধ্যেই বনের ধারে পৌঁছে গেলাম।ব্যাগ থেকে ম্যাপটা বের করে একটা পাথরের উপর রেখে আবার ভালো করে দেখে নিলাম।আরো কিছুটা পথ বাকি।গভীর রাত,চারিদিকে নিস্তব্ধ-নিঝুম,ঘন অন্ধকার।এই অন্ধকারে আমাদের পথ চলা শুরু হল। হঠাৎ কী একটা যেন আমাদের সামনে উড়ে গেল।মাঝে মধ্যে শিয়ালের ডাক শুনা যাচ্ছে।সব মিলিয়ে ভয় আমাদের মধ্যে ডানা মেলতে শুরু করে কিন্তু এসময় ভয় পেলে এখানে এত কষ্ট করে আসা অর্থহীন হয়ে পড়বে এবং ঘটনাটি স্মৃতির পাতায় হারিয়ে যাবে।

এতটুকু আসা সার্থক করার জন্যে একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে চলি।বেশি দূর না যেতেই হালকা লাল আলো দেখতে পেলাম অনেকটা পূর্বে দেখা আলোর মতো।আমরা আর না এগিয়ে পাশে ঢালু জায়গায়টায় নিজেদের আড়াল করি।ইমরুল তার ব্যাগ থেকে ‘BT’:18’নামক টেরাস্পিড ক্যামেরাটি বের করে কতগুলো ছবি তুলে নিল।ইয়ামিন তার ‘JWSPC15’ ন্যানোস্পাই ল্যাপ্টটি বের করে ছবিগুলো ‘স্পেস’ সফটওয়্যারে দিতেই এটি যে ভিন গ্রহের কোনো যান তা বুঝতে দেরি হল না।তবে কোন গ্রহের তা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি।ছবিগুলো আবার ভালো করে দেখে নিতে বলি।

ইয়ামিন ছবিগুলো রিভিউ করা শুরু করল।একটি ছবিতে ইমরুল খুব আগ্রহের সাথে জুম করতে বলল,দেখলাম লেখা আছে “IteR16.71”। ইয়ামিন সাথে সাথেই শব্দটি ‘স্পেস’ সফটওয়্যারে দিল। কিন্তু সফটওয়্যার বলে দিল,“Word not found”। আন্না বলল,“iter দিয়ে দেখ”।ইয়ামিন iter লিখে সার্চ দিল।অনেক শব্দ পাওয়া গেল কিন্তু সবতো আর নেওয়া যাবেনা।তাই আমরা বিশেষ কিছু শব্দ বের করার চেষ্টা করি। দেখতে দেখতে Jupiter শব্দটায় আসলে আন্না বলল “দাড়াও,এটি বৃহস্পতি গ্রহের ইংরেজি নাম”।এটা আমরা জানি কিন্তু এটা দিয়ে কী হবে বুঝতে না পেরে তাকে প্রশ্ন করি। বলল,“আমি কয়েকটি বইয়ে এ গ্রহে প্রাণীদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছি”। আন্না লেখাপড়ার পাশাপাশি রোবট নিয়ে গবেষণা করে।

পূর্বে কয়েকটি প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে।আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্যে আন্নার বানানো “HeliRobo” টি বের করে উড়িয়ে যানটির কাছে নিয়ে গেলাম।ভালভাবে আশপাশ দেখে নিলাম।পরিস্থিতি ভালো দেখে আমরা এগিয়ে গেলাম।অত্যন্ত সতর্কতার সাথে যানটির ভেতরে প্রবেশ করি।এতো সুন্দর যান আমি আগে কখনো দেখিনি।হঠাৎ দরজা বন্ধ হয়ে গেল।আমরা বের হওয়ার অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু পারছি না।আমরা ভেঙ্গে পড়লাম।নেটওয়ার্কও ঠিক মত কাজ করছে না,না হলে ইয়ামিনের মামার সাথে যোগাযোগ করে কিছু একটা করা যেত। হঠাৎ কন্ট্রোল রুম থেকে একটা আওয়াজ শুনি।আমরা তাড়াতাড়ি সেখানে গেলাম।দেখলাম একটা অদ্ভুত প্রাণী কথা বলছে।বলছে,“We have fixed your craft, it will be lunched after 5 minutes.So be ready.”কী করব কিছুই বুঝে ওঠতে পারছি না।

“কী করব? কী করব?”ভাবতে ভাবতে সময় অনেকটা কেটে গেল।আর মাত্র ১মিনিট বাকি।আমি বল্লাম,“না যেয়ে উপায় নেই”।ইয়ামিন বলল,“আমি প্রথমেই এখানে আসতে মানা করে ছিলাম”। ইমরুল বলল,“এখন এ কথা বললে হবে না,আকিবের কথাই ঠিক।” আমি আবার বল্লাম,“চল,স্পেশ সুটগুলো পরে নিই।” সুটগুলো পরে আমরা চেয়ারে বসে পড়ি। ইমরুল প্রধান চালকের দায়িত্ব নিল কারণ তার পাইলট হওয়ার বেশ ইচ্ছা।আন্না তার পাশে এবং আমি ডান দিকে আর ইয়ামিন বাম দিকে বসল।কিছুক্ষণ পরে প্রাণীটিকে আবার দেখা গেল,বলল,“Please tie the belt.” আমরা বেল্ট লাগিয়ে নিলাম। প্রাণীটি বলল,“Ready for lunch. 10, 9, 8, 7, 6, 5, 4, 3, 2, 1, go………” সাথে সাথেই তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করি এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

এরপর কী,কী ঘটল আমি আর জানি না।চোখ খুলে দেখি ওরা আমাকে ডাকছে এবং বলছে আমরা পৌঁছে গেছি।আমি পানি খেয়ে ভালো করে বসে জিজ্ঞেস করি,“দরজাটি কী খুলা গেছে?”। ইমরুল বলল,“দরজাটি নিজে নিজেই খুলে গেছে”।আমি বললাম,“ইশ,এমনটি যদি আগে হতো”।তারা বের হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলে আন্না বলল,“আমরা ভয়ে বের হয়নি”।

“তাহলে বের হওয়া যাক”বলতেই ইয়ামিন বলল,“এখন নয়,রাতে বের হব ভাবছি।”আমি তাদের কথা মেনে নিলাম কিন্তু আমার মন ছট­ফট করছে।অনেক দূরের পথ (প্রায় একান্ন কোটি কিলোমিটার) পাড়ি দেওয়ায় আমরা খুবই ক্লান্ত।আন্নার কাছে কিছু চিপস্ আছে সেগুলো খেয়ে শুয়ে পড়ি কিন্তু কোনো মতেই ঘুম আসছে না।শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ওঠে বসে পড়ি।সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন।সুযোগ পেয়ে আমি বেরিয়ে পড়ি।দূরে একটা শহর দেখতে পেয়ে ওটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ চলে এসেছি।হঠাৎ কিছু একটা আমার দিকে আসতে দেখে পাশে একটা পাথরে নিজেকে আড়াল করি।দেখছি এটি আমাদের যানটির মতোই এবং এটি আমাদের যানটির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।আমি ধারণা করলাম এখানকার বাহিনী খবরটা জেনে গেছে।

আন্না,ইয়ামিন,ইমরুলের কথা ভেবে দৌড় শুরু করি।আগের চেয়ে তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেছি কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করে বুঝলাম অনেক দেরি হয়ে গেছে।তাদেরকে পাগলের মত খুঁজতে শুরু করি।তন্ন তন্ন করে খুঁজার পরও তাদের দেখা পেলাম না।না পেরেমাটিতে বসে কাঁদতে শুরু করি।হঠাৎ কাঁধে কেউ হাত রেখেছে বলে মনে হল। পেছনে তাকাতেই দেখি আন্টি।আমি থ হয়ে বললাম,“এখানে.....কীভাবে!আমরা এখানে আসা তো পরের কথা বনে যাওয়ার কথাও তো আপনাকে জানাই নি।নিশ্চয় মামা বলে দিয়েছে।”আন্টি অবাক হয়ে গেলেন।আমার কথা শেষে আরেক জন কথা বলে ওঠল।বলল,“আরে বোকা তুই কি আকাশে হারিয়ে গেছিস্ নাকি!”।গলার স্বরটা ইয়ামিনের মতো লাগাই পাশে তাকাতেই তিন জনকে দেখতে পেয়ে আত্ম হারা হয়ে তাদের জড়িয়ে ধরি ।অবশেষে বুঝতে পারি এতক্ষণ আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি।

1 comment:

  1. এত সুন্দর sci-fi গল্পের শেষটা হাস্যকর হবে ভাবিনি।আমি এর সুন্দর শেষ কামনা করি।সব কিছু যুক্তিযুক্ত মনে হয়ছে।iter,51 crore k.m etc.
    এগিয়ে যাও

    ReplyDelete

Powered by Blogger.