Memories with Zahid Sir

 


২০১৮ সালের কথা। অনেকগুলো কষ্ট নিয়ে কলেজ লাইফের শুরু। একেতো নটরডেম কলেজে এক্সাম দিয়ে চান্স না পাওয়া, দ্বিতীয়ত কম নাম্বার থাকার কারণে চট্টগ্রাম কলেজ বা মহসিন কলেজে ভর্তি হতে না পেরে সিটি কলেজে ভর্তি হওয়া। 

কলেজে ক্লাস শুরু হয় জুলাই মাসে। সবাই কলেজের ক্লাসের পাশাপাশি বিভিন্ন কোচিংএ বা স্যারদের কাছে প্রাইভেট পড়ে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমার অনেক বন্ধু এসএসসির পরই ইন্টারমিডিয়েট এর ক্লাস শুরু করে। অনেকে আবার কোচিং এ ভর্তি হয়। আমি চিন্তায় ছিলাম কি করা যায়। তবে বদ্ধপরিকর ছিলাম যেখানেই পড়ি না কেন একদম এইচএসসি পর্যন্ত পড়ব। এরকম করতে করতে অর্ধেক মাস চলে যাই। পরে আমার দুলাভাই বলেন তার একজন বন্ধু আছে, কেমিস্ট্রি পড়াই, নাম জাহিদ। আমাকে স্যারের নাম্বার দিল এবং খোঁজখবর নিতে বলল।

জাহিদ স্যার  সকালে পড়াতেন জিইসি ব্যাচে আর বিকালে পড়াতেন চকবাজারে। সকালের ব্যাচে আমার সুবিধা হবে বিধায় ওই ব্যাচে পড়ার সিদ্ধান্ত নি। 

আমি যেদিন প্রথম ক্লাস করি তখন কেমিস্ট্রি প্রথম পত্রের গুণগত রসায়নের কোয়ান্টাম সংখ্যার ক্লাস হচ্ছিল। এর আগে কিছু ক্লাস মিস করলাম, তাই আমি একটু চিন্তিত ছিলাম। কারণ আমার ধারণা ছিল ব্যাচের ক্লাসগুলোতে আগের পড়া রিপিট করা হবে না। তাছাড়া ওই ব্যাচে মেয়ে স্টুডেন্ট ছিল বেশি, আমরা ছেলে ছিলাম তিন থেকে চারজন মাত্র। তাই রিভিউ ক্লাস এর ব্যাপার বলাটাও কেমন জানি লাগছিল। কিন্তু পরে স্যার নিজেই বললেন কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হলে তার থেকে ফ্রেন্ডলি জিজ্ঞেস করে নিতে আর মিস ক্লাসগুলো তিনি এক্সট্রা সময় দিয়ে বুঝিয়ে দিবেন।

মজার বিষয় হচ্ছে স্যারকে এর আগে আমি এসএসসি এর স্পেশাল কোচিং এ দেখেছিলাম কিন্তু কোনো কথা হয়নি। এইবার ইন্টারে আবার পেয়ে খুশি হলাম।

স্যারের ক্লাস গুলো ছিল যেমন সমৃদ্ধ তেমনি ছিল ইন্টারেক্টিভ। প্রত্যেকটা চ্যাপ্টার এর বেসিক খুব ক্লিয়ার করতেন এবং বড় বড় চ্যাপ্টার গুলো অনেক সময় ধরে বুঝিয়ে পড়াতেন। তাছাড়া কিছু কিছু চ্যাপ্টার যেমন: ল্যাবরেটরির নিরাপদ ব্যবহার, কর্মমুখী রসায়ন, অর্থনৈতিক রসায়ন, অনেকে বেসিক পড়াতে চান না কিন্তু স্যার এগুলোও চমৎকার করে পড়ান। যা আমার মেডিকেল এডমিশন প্রিপারেশন টাইমে অনেক হেল্প করে। 

এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় মাথা ব্যাথা জৈব যৌগ চ্যাপ্টার টাও স্যার খুব খুঁটিনাটি পড়িয়েছেন। তিনি রেগুলার ব্যাচে প্রায় দুই মাস ধরে জৈব যৌগ পড়ান। যাতে সকল মানের স্টুডেন্ট খুব সহজে বুঝতে পারে। এছাড়া স্যারের লেকচার ভিত্তিক শিট গুলো ছিল অনেক রিসোর্চ ফুল কারণ সেখানে হাজারী নাগ স্যারের বইয়ের বাইরে ও অন্যান্য রসায়ন বইয়ের তথ্য ছিল এবং MCQ এর জন্য যে ESSENCE বইটা সেটাও অনেক তথ্যবহুল ছিল।

স্যারের একটা মিনি প্রজেক্টর ছিল এবং Zahid's Chem Clinic নামে একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে। কখনও কোনো চিত্র বা কঠিন জিনিস বুঝতে হলে স্যার প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখাতেন এবং কিছু কিছু বারবার বুঝার বিষয় যেমন: সংকরায়ন, আয়ন সনাক্তকরণ, জারন বিজারন, মোলের বেসিক, পরিমাণগত রসায়ন এর ম্যাথ, পরিবেশ রসায়ন ইত্যাদি  স্যারের ক্লাসের পাশাপাশি ইউটিউব চ্যানেল থেকে বারবার দেখা যেত।

প্রথমদিকে যখন আমাদের কলেজের সিলেবাস দিয়ে দেই তখন স্যারের অনেকগুলো ক্লাস যাওয়ার পর বুঝলাম স্যার নিজস্ব একটা রুটিন অনুসারে আগাচ্ছে। যা আমাদের কলেজের সিলেবাস এর টার্ম পরীক্ষাগুলোর সাথে মিলছিলনা। মাথায় চিন্তা চাপল "তাহলে কলেজের পরীক্ষাগুলোতে কি পাস করব না?" স্যারকে এই ব্যাপারে জানালাম। স্যার বলল, "এই নিয়ে টেনশন করার কোন কারন নেই, তোমাদের সিলেবাসের যে চ্যাপ্টার গুলো আছে আমি ওগুলোর বেসিক তোমাদেরকে আলাদা করে বুঝিয়ে দিব।" প্রথম দিকে একটু কনফিউজড ছিলাম কিন্তু একবার পরীক্ষা দেয়ার পর যখন ভালো নাম্বার পেলাম তখন পরবর্তী পরীক্ষা গুলো আর তেমন মাথা ব্যথা ছিল না। একবার এমন হয়েছিল যে আমাদের পরিমাণগত রসায়ন চ্যাপ্টার টা এক্সামে আসবেই আসবে এমন অবস্থা। কিন্তু স্যার তখনো রেগুলার ব্যাচে ওই চ্যাপ্টারে যাননি। স্যার কে বলার পর তিনি আমাদেরকে তার বাসায় নিয়ে গিয়ে পুরো চ্যাপ্টারটার সারমর্ম বুঝিয়ে দেন যা পরীক্ষায় অনেক হেল্প করেছিল।

এছাড়াও কোন সময় কোন ধরনের হেল্প লাগলে স্যার কে হোয়াটসঅ্যাপে নক দিতাম, স্যার সাথে সাথে এগুলোর সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করত।

আমাদের টেস্ট পরীক্ষার আগেই রসায়ন উভয় পত্রের সিলেবাস শেষ হয়ে যায়। 

টেস্টের পরে স্পেশাল ব্যাচে আমি চকবাজার চলে আসি। রেগুলার ব্যাচে চ্যাপ্টার শেষ হওয়ার পর mcq, cq পরীক্ষা নিতেন আরে স্পেশাল ব্যাচেতো তো একদিন পরপর পরীক্ষা ছিল। শেষের দিকে কয়েকটা  ক্লাসের আগে Digital Flipboard টা আন ছিলেন এবং স্যার বলছিলেন শেষের ক্লাসগুলো এটাতে হবে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে ক্লাস হওয়ার আগেই করণা মহামারীর জন্য ক্লাস বন্ধ হয়ে যায় তাই ফ্লিপবোর্ড আর ক্লাস করা হয়নি।

তবে আমার এতটুকু আসার ক্ষেত্রে স্যারের যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে তা হল স্যারের মোটিভেশন গুলা। তিনি বলতেন, " আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন", "তোমার কোন কিছু প্রয়োজন, আল্লাহর কাছে চাও, তিনি ঠিকই দিবেন","তোমারা টেনশনে থাকলে নামাযে দাঁড়িয়ে কাঁদো, দেখবে টেনশন বলতে কোন জিনিসই ফিল হবে না।" স্যারের কথাগুলো আমাকে সকাল সাতটার মধ্যে ফৌজদারহাট থেকে জিসিএসে ক্লাস করে, তারপর কলেজে ক্লাস করে আবার বিকালে চকবাজার ক্লাস করে, বাসায় ফিরে ক্লান্ত  না হয়ে পড়ার সাহস দিত এবং দীর্ঘ সময় ধরে মেডিকেল প্রিপারেশনে হাল ছেড়ে না দেওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

আসলে লিখতে শুরু করলে তা শেষ হয় না কারণ বাস্তবে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো স্মৃতি অল্প কিছু সময়ে লিখে শেষ করা প্রায় অসম্ভব।

ধন্যবাদ সবাইকে। সামনে আমার মেডিকেল প্রিপারেশন নিয়ে লিখব ইনশাল্লাহ।

No comments:

Powered by Blogger.