অবাক অভিযোজন!

আব্দুল হান্নান আকিব

                         

শুনেছি দাদা ভাই নাকি গাছপাগল। শুনতে কেন হচ্ছে, তার বাগানটা দেখলেই বোঝা যায় তিনি কেমন মানুষ! হাজার রকম উদ্ভিদে ভরপুর ছোট একখন্ড জমি। বাড়ির আশেপাশেও গাছের কমতি নেই। তবে তার সবচেয়ে প্রিয় নাকি ভিটের নারিকেল গাছটা। ছোটবেলা থেকেই বড় হয়েছেন গাছটার সঙ্গে। তাদের বন্ধুত্ব এতটাই গভীর যে তার মনে হয় গাছটা তার সাথে কথা বলে, তার সাথে সুখ দুঃখ ভাগ করে। কিন্তু আমার অনুভূতি অতটা গভীর নয়, তাই মনে হয় এটা দাদার অবচেতন মনের ভাবনা। 
হঠাৎ একদিন....
দাদা আমাদের না জানিয়ে ওপারে চলে গেলেন। সেই ছোটবেলার বন্ধুর কথাকি একটুও স্মরণ করলেন না!


গাছটি এখন আর দখিনা বাতাসে দোলে না, তার পরম স্নেহের ঢালে বসে কোনো পাখি আর মিষ্টি সুরে গান করে না। বন্ধুকে হারিয়ে গাছটা কেমনযেন তার সতেজতা। এ যেন একের জন্যে আরেকের মায়া ত্যাগ।
এদিকে পাশের বাড়ির মানুষগুলো বারবার বাবাকে তাগিদ দিচ্ছে, ভিটের জায়গা মাপার জন্যে। দাদা ছিলেন বলে বাবা এ ব্যাপারে কোনো মাথা ঘামাননি।
কিন্তু এখনতো তাকে তা সামাল দিতে হচ্ছে!   
জায়গা মাপার দিন ঠিক হল। ভোর না হতেই গ্রামের চেয়ারম্যান আর উকিলকে নিয়ে তারা হাজির।মাপার কাজ আরম্ভ হল। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হল, তারা আমাদের ভিটার খিছু অংশ পাবে যার মধ্যে পড়েছে নারিকেল গাছটা। তবে বাবা মানতে নারাজ। দাদার শেষ স্মৃতিটুকু মুছে দিতে চাননা। তাই অনেক আকুতি মিনতি করে তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করলেন। প্রথম দিকে তারা মানতে রাজি না হলেও, শেষে স্বর্থ সাপেক্ষে মানতে রাজি হলেন।স্বর্থ হল তারা একটি দেয়াল দিবেন এবং তা গাছ ঘেষেই দিবেন। যদিও মানা কঠিন! নিরুপায় হয়ে  বাবা তা মেনে নিলেন।
দেয়াল বাঁধার কাজ আরম্ভ হল এবং খুব দ্রুতই তা শেষ করা হল।
গাছটা এমনিতেই বাঁকা ছিল কিন্তু তার বাঁক আরো স্পষ্ট হয়ে উঠল দেয়ালটা জেগে ওঠার পর। গাছটার সম্মুখভাগ পুরোটাই দেয়ালের ওপাশে পড়েছে। বাড়ির সবাই বাবাকে অনুরোধ করছে গাছটা কেটে ফেলার জন্যে কারণ এর পরিচর্যা করছি আমরা আর ফল ভোগ করছে ওবাড়ি লোকোরা! বাবা বুঝেও অবুঝ হয়ে রইলেন।

আসলে মাদের জীবনটা এরকমই। ছোটবেলা থেকে বড় হন এক স্বপ্ন নিয়ে আর পরে নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করে দেন আরেক স্বপ্ন গড়ার।
তাদের এই অভিযোজন যেন কোটি বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বিমালাকার ডাইনোসরদেরও হার মানাই!!!

No comments:

Powered by Blogger.